রোজার নিয়্যাত করা আবশ্যক। কিন্তু এ নিয়্যাত মুখে উচ্চারণ করা বা পড়া নিয়ে বর্তমান পৃথিবীতে দু ধরনের ফাতওয়া পরিলক্ষিত হয়। সৌদি উলামায়ে কেরাম, শাইখ আলবানী, শাইখ উসাইমীন, শাইখ বিন বায এবং তাদের অনুসারি (আরবিতে মুকাল্লিদ) আহলে হাদীসের উলামায়ে কেরাম একে জঘন্য বিদআত, ক্ষেত্র বিশেষে জাহেলী কর্ম বলে রায় দিয়েছেন। অন্যদিকে মিশরের দারুল ইফতার রায় অনুযায়ী তা মুস্তাহাব, কখনো কখনো সুন্নাত।

প্রথমোক্ত উলামায়ে কেরাম বরাবরের ন্যায় কমন কিছু দলীল, যুক্তি ও রসালো ব্যঙ্গ উপস্থাপন করেছেন। দলীলের মধ্যে রয়েছে- দীন পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। (সূরা মায়েদা-৩) দীনের মধ্যে নতুন সংযোজিত সবকিছু প্রত্যাখ্যাত। (বুখারি- ২৬৯৭) যুক্তি হলো- রসূল সা যা করেন নি, আমরা তা কিভাবে করতে পারি বা আমরা কি রসূল, সাহাবী, তাবেয়ীদের চেয়ে বেশি দীন বুঝে গিয়েছি? আর সর্বশেষ ব্যঙ্গ (বরাবরের মতো যার দায়িত্ব অত্যান্ত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে পালন করেছেন বাংলাদেশের আহলে হাদীস বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম) হলো ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচলিত রোজার নিয়্যাতের “গাদান” শব্দ নিয়ে। কেননা তারা পড়েন-
نويت أن أصوم غدا…
অর্থাৎ, আমি নিয়্যাত করলাম যে রোজা রাখবো আগামীকাল

“গাদান” এর শাব্দিক বাংলা অর্থ হলো আগামীকাল। রোজা যিনি রাখছেন তিনি রাতের বেলা (বিশেষত সাহরীর সময়) নিয়্যাত করেন, আর চান্দ্র মাসের হিসেবে আরবীতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে দিন শুরু হয়। তাহলে নিয়্যাত হবে আজকের কিন্তু পড়ছেন আগামীকালের রোজার। কেউ কেউ এ উপমহাদেশের মুসলমানদের গাধা (মনে হয় আরবি “গাদান” শব্দের প্রতি খেয়াল রেখে তাচ্ছিল্যের সাথে) বলে গালাগালি করে তাদের নব্য অন্ধ অনুসারী যুবাদের কাছে বেশ সুনাম, আস্থা ও বাহবাহ কুড়িয়েছেন।

১. নিয়ত করা আর পড়া : আসলেই কি বিতর্ক আছে?

একটি বিষয়ে সকলেই একমত নিয়্যাত এটা করার জিনিস, মুখে পড়ার নয়। কেননা, এতে কোনো বিতর্ক নেই নিয়্যাত মূলত অন্তরের কাজ। এমনকি যাদের মতে নিয়্যাত পড়া মুস্তাহাব, তারাও বলছেন- যদি কোনো ব্যক্তির অন্তরের নিয়্যাতের সাথে মুখের উচ্চারিত বাক্যের অমিল হয়, তাহলে অন্তরের নিয়্যাতটাই ধর্তব্য হবে, মৌখিক উচ্চারণ নয়। যেমনটি বলা হয়েছে
فلو نوى بقلبه صلاة الظهر ولكن سبق لسانه فقال : نويت أصلي العصر فإنه لا يضر لأنك قد عرفت أن المعتبر في النية إنما هو القلب النطق باللسان ليس بنية وإنما هو مساعد على تنبيه القلب فخطأ اللسان لا يضر ما دامت نية القلب صحيحة وهذا الحكم متفق عليه عند الشافعية والحنابلة
যেমন কেউ যোহরের নামায আদায়ের সময় ভুলক্রমে উচ্চারণ করে ‘আমি আসরের নামায পড়ার নিয়্যাত করছি’ তাহলে অন্তরেরটাই গ্রহণযোগ্য হবে। কারণ মুখের উচ্চারণ মূল নিয়্যাত নয়, বরং তা অন্তরের নিয়্যাতের সহায়ক মাত্র। যতক্ষণ অন্তরের নিয়্যাত সঠিক হবে, ততক্ষণ মৌখিক উচ্চারণের ভুল কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আর এ হুকুমটির ব্যাপারে শাফেয়ী ও হাম্বলীরা একমত।
[আল ফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া, খ: ১, পৃ: ২৩১]

প্রখ্যাত হানাফী ইমাম ফখরুদ্দীন যায়লায়ী র. (ইন্তে: ৭৪৩ হি.) বলেন
وَأَمَّا التَّلَفُّظُ بِهَا فَلَيْسَ بِشَرْطٍ وَلَكِنْ يَحْسُنُ لِاجْتِمَاعِ عَزِيمَتِهِ
অতঃপর নিয়্যাত উচ্চারণ করা শর্ত নয়। তবে সংকল্প সুদৃঢ় করণের জন্য উত্তম। [তাবইনুল হাকায়েক ১/৪৭৭]

২. নিয়্যাত উচ্চারণ করার কারণ: দলীল ও যুক্তি খন্ডন দরকার আছে কি না?

ক. অন্তরের একাগ্রতা আনয়ন

নিয়্যাত উচ্চারণ করার অর্থ হলো استحضار النية অর্থাৎ নিয়্যাতকে আহবান বা হাজির করা। অন্তরে যা আছে তাকে উচ্চারণের মাধ্যমে উপস্থিত করা, স্মরণ করা, মজবুত করা, হুজুরুল কলব ইত্যাদি। এটা পরীক্ষিত ও স্বীকৃত যে, মৌখিক উচ্চারণের দ্বারা অন্তরের কৃত নিয়্যাত/সংকল্প আরো বেশি মজবুত হয়। এমনকি আবুল ওয়াফা ইবনুল আকীল হাম্বলী (ইন্তে: ৫১৩ হিজরী। ৮০০ খন্ডে লিখিত তাঁর ‘কিতাবুল ফুনূন’ সম্পর্কে শামসুদ্দীন জাহাবী বলেছেন- পৃথিবীতে এর চেয়ে বিশাল কোনো কিতাব রচিত হয় নি।) বলেছেন-
من لم يستحضر النية بسهولة بقلبه،
ولا يستحضرها إلا بالتلفظ وجب عليه التلفظ بها، لأن ما لم يتم الواجب إلا به فهو واجب
যে ব্যক্তি সহজেই নিয়্যাত আহবান (ইস্তেহদারুন নিয়্যাত) করতে পারেন না এবং মৌখিক উচ্চারণ ছাড়া তা পারেনই না তার জন্য মুখে নিয়্যাত উচ্চারণ করা ওয়াজিব। কেননা, যা না করলে ওয়াজিব পূরণ হয় না, তা করাও ওয়াজিব।

আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উস্তাদ শায়খ আব্দুর রহমান জাজরী (ইন্তে- ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ) বলেন,
يسن أن يتلفظ بلسانه بالنية كأن يقول بلسانه أصلي فرض الظهر مثلا لأن في ذلك تنبيها للقلب
নিয়্যাতের শব্দগুলি মুখে উচ্চারণ করা সুন্নাত। যেমন মুখে এভাবে বলা যে, আমি যোহরের ফরজ নামায পড়ছি। কেননা, এর মধ্যে অন্তরের প্রতি গুরুত্বারোপ হয়।
[আল ফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া ১/২৩১]

বর্তমান বিশ্বে আলোচিত শাফেয়ী মাযহাবের শ্রেষ্ঠ আলেম ওয়াহবাতুয যুহাইলি র. (ইন্তে- ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ)
محل النية باتفاق الفقهاء وفي كل موضع: القلب وجوباً، ولا تكفي باللسان قطعاً، ولا يشترط التلفظ بها قطعاً، لكن يسن عند الجمهور غير المالكية التلفظ بها لمساعدة القلب على استحضارها،
সকল ক্ষেত্রে ফুকাহায়ে কেরামের ঐকমত্যে নিয়্যাতের জায়গা হলো অন্তর। শুধু মুখে উচ্চারণ করলে হবে না। আর মুখে তা উচ্চারণ করা শর্ত নয়। তবে শুধু মালেকী ছাড়া জুমহুরের মতে নিয়্যাত অন্তরে হাজির করার সহায়ক হিসেবে তা মুখে উচ্চারণ করা সুন্নাত।
[আল ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু ১/১৩৭]

খ. মনের ওয়াসওয়াসা দূর করণ

আমাদের মনের ওয়াসওয়াসা দূরীকরণে মৌখিক নিয়্যাত একটি পরীক্ষিত আমল। মালেকী মাযহাবে সাধারণ ক্ষেত্রে মৌখিক নিয়্যাত উচ্চারণকে নিরোৎসাহিত করা হলেও অন্য তিন ইমামের সাথে তিনিও একমত যে, যদি কোনো ব্যক্তির মনে শয়তান ওয়াসওয়াসা প্রদান করে তাহলে তার জন্য মৌখিক নিয়্যাত উচ্চারণ করা জরুরী। যেমনটি ফিকহ বিশ্বকোষে রয়েছে-
ذَهَبَ الْحَنَفِيَّةُ فِي الْمُخْتَارِ وَالشَّافِعِيَّةُ وَالْحَنَابِلَةُ فِي الْمَذْهَبِ إِلَى أَنَّ التَّلَفُّظَ بِالنِّيَّةِ فِي الْعِبَادَاتِ سُنَّةٌ لِيُوَافِقَ اللِّسَانُ الْقَلْبَ.وَذَهَبَ بَعْضُ الْحَنَفِيَّةِ وَبَعْضُ الْحَنَابِلَةِ إِلَى أَنَّ التَّلَفُّظَ بِالنِّيَّةِ مَكْرُوهٌ .وَقَال الْمَالِكِيَّةُ بِجَوَازِ التَّلَفُّظِ بِالنِّيَّةِ فِي الْعِبَادَاتِ ، وَالأْوْلَى تَرْكُهُ ، إِلاَّ الْمُوَسْوَسَ فَيُسْتَحَبُّ لَهُ التَّلَفُّظُ لِيَذْهَبَ عَنْهُ اللَّبْسُ .
হাম্বলী, শাফেয়ীদের মত ও হানাফী উলামায়ে কেরামের গ্রহণযোগ্য মত হলো ইবাদাতসমূহে নিয়্যাতের শব্দ উচ্চারণ করা সুন্নাত। আর কিছু হানাফী ও কিছু হাম্বলী আলেম এটাকে মাকরূহ বলেছেন। আর মালেকীগণের মতে ইবাদতে নিয়্যাতের মৌখিক উচ্চারণ জায়েজ তবে তা না করাই উত্তম। শুধু ওয়াসওয়াসায় পড়া ব্যক্তি ব্যতিক্রম। তার জন্য সন্দেহ দূরীকরণে নিয়্যাত মৌখিক উচ্চারণ মুস্তাহাব। [আল মাওসুওয়াতুল ফিকহিয়্যা আলকুয়াইতিয়্যা খ: ৪২, পৃ: ৬৭]

বুঝা গেলো নিয়্যাতের মৌখিক উচ্চারণ কোনো ইবাদত নয় বা দীনের কোনো জরুরী বিষয় নয়। উলামায়ে কেরামের কেউই এটাকে ফরয, ওয়াজিব বলছেন না। তাই এর স্বপক্ষে বিস্তর দলীল দেয়া বা বিপক্ষের নকলী দলীল ও যুক্তির অসারতা নিয়ে আলোচনা করা অর্থহীন। এলার্ম ঘড়ির সাহায্যে যথাসময়ে ঘুম থেকে জেগে নামায আদায় বা জায়গা পাকের শর্তের কথা মাথায় রেখে জায়নামায ব্যবহার বা আল্লাহ তা‘আলার যিকর করতে তাসবীহর দানা ব্যবহার -এগুলো কেউ ইবাদত মনে করে ব্যবহার করে না। অথবা এগুলো ব্যবহারের আলাদা সাওয়াবের বয়ানও কেউ দেন না। একইভাবে নিয়্যাতের উচ্চারণটাও মূল আমলের সহায়ক একটা কাজ। নিয়্যাত উচ্চারণ করলে এতো এতো সাওয়াব হবে এমন বয়ান আমরা কোথাও শুনিনি।

৩. রসালো ব্যাঙ: ‘গাদান’ শব্দ নিয়ে যত কথা, ‘গাধা’ গালিটা কার ওপর যেতে পারে?

প্রথম কথা হলো রোজার নিয়্যাতের জন্য নির্ধারিত কোনো শব্দ আমরা হাদীস শরীফে পাই নি। আর ‘গাদান’ শব্দ দিয়েই নিয়্যাত করতে হবে এটাও জরুরী নয়। আবার নিয়্যাত আরবিতে করতেই হবে এটাও জরুরী নয়। যে যে ভাষাভাষি তিনি তার মাতৃভাষাতে নিয়্যাত করতে পারেন। তদুপরি বড় মাপের অসংখ্য উলামায়ে কেরাম (যেমন- শামসুল আইয়্যেম্মা ইমাম হালওয়ানী, ইমাম ইবনুল হাদ্দাদ, ইমাম ইবনু আবেদীন শামী র.) তাদের কিতাবে রাতের বেলা নিয়্যাত করার ক্ষেত্রে রোজার পালনকারী ‘নাওয়াইতু আন আসুমা গাদান’ বলে নিয়্যাত করার কথা লিখেছেন। তাদের সমালোচনা বা গালি-গালাজ করার আগে একটু পড়াশুনা করা উচিত ছিল। কেননা, প্রাথমিক শ্রেণির পড়াশুনা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলের শিক্ষার্থীদের ভুল ধরতে যাওয়া শুধু বোকামীই নয়, শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

ক. আরবি ভাষার ব্যাপকতা/বিশালতা

ভাষা হিসেবে আরবি অনেক প্রাচুর্যে ভরপূর একটি ভাষা। সমার্থক শব্দে ভরপুর, একই শব্দের নানারূপ ব্যবহার বৈচিত্রের হাজার লক্ষ উদাহরণ আরবি সাহিত্য পাঠকদের কাছে সহজেই লক্ষ্যণীয়। এক ‘গোলাম’ শব্দের কতো অর্থ! উটের প্রতিশব্দ শতাধিক, সিংহকে বুঝাতে আরবরাতো প্রায় ২০০ এর অধিক শব্দ ব্যবহার করেছে। হাদীস শরীফে মাগরীব ও এশা উভয় নামাযকে ‘সলাতুল ইশা’ বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। মাওলা শব্দ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজের জন্য ব্যবহার করেছেন। আবার সেই শব্দই কখনো অভিভাবক অর্থে, কখনো কৃতদাস অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে কুরআন ও হাদীসে। তাই শুধু ডিকসনারিতে ‘গাদান’ শব্দের বাংলা অর্থ ‘আগামীকাল’ -এটা দেখেই তীর্যক সমালোচনা, ব্যাঙ্গাত্মক মন্তব্য, বিশেষকরে উপমহাদেশের মুসলমানদের ‘গাধা’ বলে গালি দেওয়া কতোটুকু বোকামী বা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হয়েছে, তা আশা করি পরবর্তী শিরোনামের অধীন লিখা পাঠ করে পাঠকই নির্ণয় করবেন। (যদি পাঠক শাইখদের অন্ধ মুকাল্লিদ না হন। কেননা, অন্ধ মুকাল্লিদরা তাদের শাইখগণ যা বলেন, দিব্যবাণীর মতো তা বিশ্বাস করেন, বলে ও বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার করে বেড়ান)

খ. গাদান শব্দের বহুরূপ ব্যবহার

একথা সঠিক যে গাদান শব্দের অর্থ আগামীকাল। আগামীকাল ছাড়াও কিন্তু এর ভিন্ন ব্যবহার আছে। যেমন-

• ক্ষণিক পর, কিয়ামত দিবস

পবিত্র কুরআনে রয়েছে,
وَلَا تَقُولَنَّ لِشَيْءٍ إِنِّي فَاعِلٌ ذَلِكَ غَدًا – إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ
আর কখনই আপনি কেনো বিষয়ে বলবেন না, আমি তা আগামীকাল করব ‘আল্লাহ ইচ্ছে করলে’ এ কথা না বলে। [সূরা কাহাফ- ২৩]

অত্র আয়াতে ‘গাদান’ যদি শুধু ‘আগামীকাল’ই হয়, তাহলে কেউ ‘ইন শা আল্লাহ’ না বলে কোন এক সকাল বেলা যদি বলে ‘আমি অবশ্যই ৩ ঘন্টা পর কাজটি করবো’ তাহলে সে গুনাহগার হবে না। কেননা, সে তো আর আগামীকালের কোনো কাজের কথা বলছে না।

প্রকৃতপ্রস্তাবে অর্থ আয়াতে ‘গাদান’ শব্দের অর্থ ভবিষ্যতের যেকোনো সময়, সেটা একটু পরেই হতে পারে। অতএব একটু পর কোনো কাজ করবো বললেও ইন শা আল্লাহ বলতে হবে। আবার অনেক পরের সময় এমনকি কিয়ামতের দিনও হতে পারে যেমন ইরশাদ হচ্ছে,
وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ
প্রত্যেকেই চিন্তা করে দেখুক, আগামীকালের (অর্থাৎ কিয়ামত দিবসের) জন্য সে কী (পুণ্য কাজ) অগ্রিম পাঠিয়েছে।
[সূরা হাশর- ১৮]

• দিনের খাবার/ সকালের নাস্তা

পবিত্র কুরআনে মূসা ও খিজির আ এর ঘটনা প্রসঙ্গে রয়েছে,
فَلَمَّا جَاوَزَا قَالَ لِفَتَاهُ آتِنَا غَدَاءَنَا لَقَدْ لَقِينَا مِنْ سَفَرِنَا هَذَا نَصَبًا
যখন তারা আরো অগ্রসর হলেন, তখন মূসা তার সঙ্গীকে বললেন, ‘আমাদের নাশতা আনো, আমরা তো আমাদের এই সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।’
[সূরা কাহাফ- ৬২]

এ আয়াতে বোধ করি মূসা আ তাঁর সঙ্গি ইউসা আ কে আগামীকাল আনতে বলেন নি।

গ- গালিটি প্রিয় নবীজীর ওপর যায়নিতো?

অনেক হাদীসে রয়েছে, রসূল সা. রাতের বেলা ঐদিনকে বুঝাতে ‘গাদান’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। তাই গালাগালি করার আগে চিন্তা করা উচিত।

** সুনান নাসাইতে রয়েছে, ইবনে আব্বাস রা বলেন,
جَاءَ أَعْرَابِىٌّ إِلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أَبْصَرْتُ الْهِلاَلَ اللَّيْلَةَ. قَالَ أَتَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ . قَالَ نَعَمْ. قَالَ يَا بِلاَلُ أَذِّنْ فِى النَّاسِ فَلْيَصُومُوا غَدًا .
এক বেদুঈনব নবী সা এর কাছে এসে বললেন, আমি আজ রাতে নতুন চাঁদ দেখেছি। রসূল সা জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নাই আর মুহাম্মদ সা তাঁর বান্দা ও রসূল? বেদুঈন বললেন- হ্যাঁ। রসূল সা তখন বললেন, হে বেলাল লোকদেরকে ঘোষণা দাও তারা যেন আগামীকাল রোজা পালন করে।

অত্র হাদীসে রসূল সা নিজে ‘গাদান’ বলে আজকের দিন বুঝিয়েছেন।

** বুখারীতে রয়েছে, হযরত আলী রা খয়বার যুদ্ধ থেকে প্রথমত তাঁর চোখের অসুখের জন্য পিছিয়ে ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি এসে নবীজির সাথে অসুস্থতা সত্তে¡ও মিলিত হলেন।
فَلَمَّا كَانَ مَسَاءُ اللَّيْلَةِ الَّتِي فَتَحَهَا اللَّهُ فِي صَبَاحِهَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ أَوْ لَيَأْخُذَنَّ الرَّايَةَ غَدًا رَجُلًا يُحِبُّهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ
যখন সে রাত এলো যে রাত শেষে সকালে আলী রা খয়বার জয় করেছিলেন, তখন রসূল সা. বললেন, আগামীকাল আমি এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দিবো যাকে আল্লাহ ও তাঁর রসূল ভালোবাসেন।

অত্র হাদীসেও রসূল সা রাতের বেলা সেদিনকে ‘গাদান’ শব্দ দিয়ে ব্যক্ত করেছেন। এখন কি আমাদের শাইখগণ নবীর কথাকে হাস্যকর…(যা উচ্চারণ করার মতো নয়) বলে ব্যাঙ্গ করবেন? প্রশ্ন রইলো।

আমাদের দায়

  1. আমাদের খেয়াল রাখা দরকার যার নিয়্যাত পড়েন তারা যেনো বুঝে পড়েন। কেননা, আমাদের অনেকের না বুঝে কেবল মুখস্ত আরবিতে নিয়্যাত পড়েন, কী পড়েন তা বুঝেন না। কমেন্টে আবার কেউ প্রশ্ন করবেন যে, নিয়্যাতের অর্থ কী বলেন, তাই লিখে দিলাম।

‘হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল (অর্থাৎ আজ) পবিত্র রমাদ্বান মাসে তোমার পক্ষ হতে ফরজ রোজা রাখার নিয়্যাত বা সংকল্প করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ হতে তা কবূল করো। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞাত।’

লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মদ বদরুজ্জামান রিয়াদ

  1. মুহাদ্দিস দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসা ঢাকা